সম্পাদকীয়

জীবনের উদ্দেশ্য: নিজের পথ নিজেই নির্ধারণ

অসামাজিক হোন, পরিশ্রমী হোন, সফল হোন: আপনার জীবনের গল্প লিখুন

বিজ্ঞাপন

Disclaimer of the article ‘জীবনের উদ্দেশ্য: নিজের পথ নিজেই নির্ধারণ’: The views and opinions expressed in this article are those of the author and do not necessarily reflect the official policy or position of any agency or organization. The content provided is for informational purposes only and is not intended as a substitute for professional advice. The author assumes no responsibility for errors or omissions in the contents of the article. Any action taken upon the information found in this article is strictly at the reader’s own risk.

আজ আমি যে কথাটি বলতে যাচ্ছি, তা হয়তো আপনাকে কিছুটা বিব্রত করতে পারে। আমি একটি সরল সত্য উপস্থাপন করতে চাই – ‘আমাদের জীবনের কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নেই।’ হ্যাঁ, আপনি সঠিকভাবেই পড়েছেন। আমাদের জীবনের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নেই। দর্শন অনুসন্ধান করে, গুগল এবং ইউটিউবে সার্চ করে আপনি আপনার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাবেন না, কারণ যার অস্তিত্ব নেই তা খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য আমাদেরকেই নিজেদের জন্য তৈরি করতে হবে, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

যদি আপনি স্কুলে পড়াশোনা করেন, তবে আপনার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ভালো মার্ক বা গ্রেড অর্জন করা। স্কুল শেষ হলে, একটি মানসম্মত কলেজে ভর্তি হওয়া আপনার পরবর্তী লক্ষ্য হবে। এরপর, আপনি কোন শাখায় পড়বেন – বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য – তা নির্ধারণ করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে পড়বেন এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, তা নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়া আপনার আরেকটি উদ্দেশ্য হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে, আপনি কোন কর্মক্ষেত্র বা পেশা বেছে নেবেন, সেটিও আপনার নিজের তৈরি করা জীবনের উদ্দেশ্য হবে।

আমরা জীবনের উদ্দেশ্যের কোনো ‘ডিফল্ট মোড’ নিয়ে জন্মাই না। পৃথিবীতে আসার পর, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য আমরা নিজেরা নির্মাণ করি। কোনো বিশেষ নির্দেশনা নেই যা অনুসরণ করে আপনি আপনার জীবনের উদ্দেশ্য তৈরি করবেন। প্রথমত, আমরা জানি না যে আমরা কতদিন বাঁচব, এবং সেই সময়ে আমাদের কী হতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা যতদিন পৃথিবীতে থাকব, সেই সময়ে আমরা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকব কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

ব্যক্তি বিশেষের জীবনের উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে। কেউ ক্ষমতা চায়, কেউ অর্থ, কেউ খ্যাতি, আবার কেউ ভালোবাসার মানুষকে। প্রত্যেকে তাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিজেদের চলমান পরিস্থিতি অনুযায়ী গড়ে তোলেন। জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণে কোনো গদবাঁধা নিয়ম নেই। পৃথিবীতে এমন কোনো বই নেই যা আপনার পরিস্থিতি বুঝে আপনার জীবনের উদ্দেশ্য তৈরি করে দেবে। কোনো প্রতিষ্ঠান, শুভাকাঙ্ক্ষী, হুজুর, গুরু, নাটক/সিনেমা/সিরিজ, বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজন, পডকাস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা আর্টিকেল—কেউই আপনার জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখে না এবং আপনাকে সেভাবে গাইড করতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

আপনি হয়তো বিভিন্ন আর্টিকেল, ইউটিউব ভিডিও, বা লেখকদের কথায় এই পরিচিত বাণীটি শুনে থাকবেন—‘তিনবেলা খাবার, একটি বিছানা, এবং একজন বন্ধু থাকলেই বেঁচে থাকা যায়।’ কিন্তু আমি মনে করি, এই ধারণাগুলো অত্যন্ত সীমিত। মানুষের জীবনের আকাঙ্ক্ষা এর চেয়ে অনেক বেশি। প্রত্যেকে নিজেকে বিশেষ মনে করতে চায়, জনপ্রিয় হতে চায়, সম্মানিত হতে চায়, এবং এমন ক্ষমতা রাখতে চায় যা দিয়ে তার স্বাধীনতা বজায় রাখা সম্ভব। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বলতেন, ‘এই পৃথিবীতে আমরা সবাই পাগল, কিন্তু কে কীসের জন্য পাগল তা বলা বড়ই অদ্ভুত।’ প্রথমে আমি এই কথায় গুরুত্ব দিইনি এবং এটিকে অনর্থক মনে হয়েছিল, কিন্তু এখন আমি বুঝি যে প্রত্যেকের জীবনের আকাঙ্ক্ষা এবং উদ্দেশ্য সত্যিই অনন্য এবং ব্যক্তিগত।

জীবনে আমাদের প্রত্যেকেরই নানা ভূমিকা পালন করতে হয়, যেমনটি শেক্সপিয়রের নাটক ‘As You Like It’ এ বলা হয়েছে—আমরা সবাই অভিনেতা। কোন পথ আপনি বেছে নেবেন তা সম্পূর্ণভাবে আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং নিজের জন্য নির্দিষ্ট ভূমিকা বেছে নেওয়া যত দ্রুত সম্ভব হয়, তত দ্রুত আপনি জীবনে অগ্রগতি করতে পারবেন। কারণ যদি আপনি জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে না পারেন, তাহলে সমাজ ও পরিবার আপনাকে প্রাধান্য দেবে না। এছাড়াও, বর্তমান স্ট্যাটাস-চালিত সমাজে নিজের ভূমিকা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই যত দ্রুত আপনি আপনার জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে পারবেন, তত দ্রুত আপনি সেই লক্ষ্যের দিকে কাজ করতে পারবেন।

আমাদের মধ্যে যে মহৎ হওয়ার ইচ্ছা বিরাজ করে, তা অবজ্ঞা করা বা অস্বীকার করা যায় না। নৈতিকতা ও নীতিশাস্ত্র থাকলেও, আপনার জীবনের উদ্দেশ্যের জন্য আপনাকেই একটি গল্প তৈরি করতে হবে। যদি এখনও শুরু না করে থাকেন, তাহলে এখনই শুরু করুন। নিজের ভূমিকা নির্বাচন করুন এবং অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করুন। যদি আপনি সত্যিকারের অগ্রগতি করতে চান, তাহলে আপনাকে হয়তো অসামাজিক হতে হবে, কর্মনিষ্ঠ হতে হবে, ভ্রমণ কমাতে হবে, বিনোদন থেকে দূরে থাকতে হবে, এমনকি একাকীত্ব মেনে নিতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, যদি আপনার ভূমিকা ও গল্প সফল হয়, তাহলে সেই সাফল্য অমূল্য হবে। ধন্যবাদ।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

মেহেদি হাসান (বিকেল)

প্রধান সম্পাদক, অভিযাত্রী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন
Back to top button