কে কে, যিনি কৃষ্ণ কুমার কুন্নথ নামেও পরিচিত, ৫৩ বছর বয়সে কলকাতায় একটি লাইভ শো করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। ‘হম দিল দে চুকে সনম’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’, ‘কাইটস’ -এর মতো জনপ্রিয় সিনেমার গান গেয়েছিলেন। ‘তড়প তড়প কে’, ‘খোদা জানে’, ‘অলবিদা’, ‘হম রহে য়া না রহে’ -এর মতো জনপ্রিয় গানের জন্য পরিচিত।
কে কে, পুরো নাম কৃষ্ণ কুমার কুন্নথ। গোটা দুনিয়া তাঁকে কেকে নামেই চেনে, জানে, ভালবাসে। কলকাতায় লাইভ প্রোগ্রাম করছিলেন, মাইক হাতে মঞ্চ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কলকাতার নজরুল মঞ্চ। এমনিতেও তাঁর স্বভাব যখন স্টেজে ওঠা, যেই হাতে মাইক গ্রহণ করলেন, তাঁর স্টেজ তাঁরই দখলে। দর্শক বা অডিয়েন্স কে মাতিয়ে দেওয়া। তাঁর সুর লহরী দিয়ে। এতো পছন্দ ছিলো যাঁর গান, কত গান তাঁর, আশ্চর্য, তাঁর না কি সঙ্গীতের কো প্রথাগত তালিম ছিল না! বিশ্বাস না করার কথাই বটে!
বয়স তো খুব বেশী ছিল না! মাত্রই ৫৩ বা ৫৪ বছর বয়সী কে কে। ‘কে’ জানতো নজরুল মঞ্চ দাপিয়ে, কাঁপিয়ে, দর্শকদের মন জয় করে তার এক ঘন্টার ভেতরে তিনি চলে যাবেন না ফেরার দেশে!
তখন গাইছিলেন –
হম রহে ইয়া ন রহে কাল
কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল…
তাঁর ইন্সট্রাগ্রাম অ্যাকাউন্টের হ্যান্ডল নেম কে কে লাইভ নাউ। কি আশ্চর্য সমাপতন মঞ্চ থেকে পারফর্ম করার পরই জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন সঙ্গীত শিল্পী কৃষ্ণ কুমার কুন্নথ, কে কে!
এক ঘন্টা আগের লাইভ পারফরম্য্যান্স তাঁর ইনসট্রাগ্রাম স্টোরিতে যে এখনো জ্বল জ্বল! এখনো আক্টিভ! অথচ মানুষটা কি ভাবে হয়ে গেলেন নেই রাজ্যের বাসিন্দা! আর কি আশ্চর্য মিল, কলকাতা ছিল তাঁর অতি পছন্দের শহর, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন শিল্পী, ‘কলকাতা তো এক সুরের শহর’। সেই সুরের শহরেই নিজের সুরের সফর শেষ করলেন তিনি।
অসংখ্য হিট গানের গায়ক, “গ্যাং স্টার”, “হম দিল দে চুকে সনম”, “কাইটস”, “লাইফ ইন এ মেট্রো” – অসংখ্য হিট সিনেমা।
“হম রহে য়া না রহে”, “তড়প তড়প কে”, “খোদা জানে য়”, “অলবিদা” এর মতো জনপ্রিয়, কর্ণ মধুর গান কে কে এর। তাঁর হিট অ্যালবাম ছিলো ঝুলিতে তাঁর- “পল”, “হম-সফর” ।
মলয়ালাম পরিবারের সন্তান তিনি। বড় হয়েছিলেন দিল্লীতে। মুম্বাইয়ের ফিল্মি জগতে আসার আগে দেদার বিজ্ঞাপনী জিঙ্গলস করেছেন। গায়ক ও সুরকার ইসমাইল দরবার এর হাত ধরে তাঁর হিন্দি ফিল্মজগতের প্রথম ব্রেক-আপ, “হম দিল দে চুকে সনম…” ছবি দিয়ে।
এর আগে গুলজারের “মাচিস” ছবিতে কিছুটা অংশ প্লে ব্যাক করা। এ কথা বলেছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তাঁর “শেরদিল” ছবিতে গেয়েছেন কে কে। রেকর্ডিংয়ের সময়ে এসেছিলেন গুলজার – তিনি ঐ ছবির সঙ্গীত পরিচালক। গুলজার এর সামনে “মাচিস” এর গানটি গেয়ে শোনান কে কে।
সৃজিত স্মরণ করেছেন- গত মাসেই তো আলাপ হলো… কত গল্প করেছিলাম আমরা… বড় অল্প সময়ের পরই তুমি চলে গেলে… বিদায় বন্ধু!
কে কে এর সঙ্গে কলকাতায় আলাপের বড় যোগসুত্র সঙ্গীতকার প্রীতম, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কে কে এর মৃত্যুর প্রতিক্তিয়ায় জিৎ বলেছেন- আমি, কে কে, শান, সোনু একটা গ্রুপ ছিলাম। আমাদের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া, প্রচুর গল্প হতো। ও বাঙালী খাবার খেতে ভালবাসতো। আমরা শেষ কাজ করেছিলাম “সড়ক টু” তে।
অবশ্য বাঙালীদের কাছ থেকে বন্ধুত্ব, ভালোবাসার সঙ্গে বিরোধিতাও পেয়েছেন কলকাতায় কে কে। নজরুল মঞ্চে পারফর্ম করা নিয়ে তীর্যক কটাক্ষ করেছিলেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী রুপঙ্কর বাগচি। কিন্তু কে কে তাঁর গান দিয়েই উত্তর দিয়ে গেছেন। তাঁর গানই তাঁর হয়ে কথা বলবে।
কে কে এর গান
ইয়ারো – রকফোর্ড
তড়প তড়প কে – মুভি: হম দিল দে চুকে সনম
তুহি মেরে শব হ্যায় – মুভি: গ্যাংস্টার
অলবিদা – মুভি: লাইফ ইন এ মেট্রো
জ্বরা সা – মুভি: জান্নাত
আজব সি – মুভি: ওম শান্তি ওম
আওরাপন বনজারাপন – মুভি: জিসম
বস এক পল – মুভি: বস এক পল
দিল কিউ ইয়ে মেরা – মুভি: কাইটস
কেয়া মুঝে পেয়ার হ্যায় – মুভি: উহো লমহে
অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হোটেলে নিয়ে যাবার কিছু পরেই কলকাতার এক নার্সিং হোমে নিয়ে গেলে ডা. তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ডাক্তারের মত অনুযাযী, কে কে এর কয়েকটি জায়গায় ব্লকেজ তাঁর মৃত্যুর কারণ, পোস্টমর্টেম রিপোর্টও এই কথার সমর্থক।
অর্গানাইজেরের কথা অনুয়ায়ী জানা গেছে- প্রায় ৫০০০ লোক এই প্রোগ্রাম দেখতে এসেছিলো। এন্ট্রি গেট থেকে লোক লাফিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছিলো। অডিটোরিয়মে এসি কাজ করছিলো না।
কেকের অন্তিম সংস্কার বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের বর্সোবায় হয়েছে।
শেষে ফের বলি-
হম রহে যা না রহে কাল
কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল…
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.