বিস্ময়ের চমক শরৎচন্দ্র ও তাঁর ১০টি অমূল্য রচনা

কে এই ব্যক্তি? এটিও নিশ্চিত কোন ছদ্মনাম! কে এই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! এর উত্তর পেয়েছে পাঠক পরবর্তী তাঁর প্রতিটি উপন্যাস, গল্পে। বেরুনো মাত্র যা তুমুল জনপ্রিয়। সমকালে যা অন্য লেখক পাননি।

Dec 27, 2023 - 16:00
Dec 27, 2023 - 16:07
 0  29
বিস্ময়ের চমক শরৎচন্দ্র ও তাঁর ১০টি অমূল্য রচনা
বিস্ময়ের চমক শরৎচন্দ্র ও তাঁর ১০টি অমূল্য রচনা

অন্য লেখকেরা অনেকে প্রশংসা পেয়েছে, কিন্তু সার্বজনীন হৃদয়ের এমন আতিথ্য পায়নি। এ বিস্ময়ের চমক নয়, এ তো প্রীতি। অনায়াসে যে প্রচুর সফলতা তিনি পেয়েছেন তাতে তিনি আমদের ঈর্ষাভাজন। আজ তাঁর অভিনন্দন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে উচ্ছসিত... তিনি বাঙালীর হৃদয়ে বেদনার কেন্দ্রে আপন বাণীর স্পর্শ  দিয়েছেন।


যাঁর সম্পর্কে কথা গুলি বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ,
তিনি আর কেউ নন, তিনি অমর কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সন্দেহ নেই একদা বিস্ময়ের চমক নিয়েই কথা শিল্পী শরৎচন্দ্রর আবির্ভাব। কেউ ভাবতে পারেন নি যখন ভারতীপত্রিকায় এক অজানা লেখকের বড়দিদি নামে এক উপন্যাসের দুকিস্তি ছাপা হলো, তখন অনেকেই কল্পনা করতে পারে নি এই অসামান্য রচনা এক অখ্যাত নবীন লেখকের, যার নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এমন কি শেষ পর্বে যখন তাঁর মুদ্রিত হলো নাম তখনো কাটতে চায় নি অবিশ্বাসের ঘোর


কে এই ব্যক্তি?
এটিও নিশ্চিত কোন ছদ্মনাম! কে এই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! এর উত্তর পেয়েছে পাঠক পরবর্তী তাঁর প্রতিটি উপন্যাস, গল্পে। বেরুনো মাত্র যা তুমুল জনপ্রিয়। সমকালে যা অন্য লেখক পাননি।



শরৎচন্দ্রের কয়েকটি রচনা


১. গৃহদাহ

এমন এক যুবতীর প্রেম গাথা, যে একসাথে দুই যবকের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়েছেন কিন্তু আলাদা মর্যাদায়। হৃদয় বিবশতার এক অদেখা, অমূল্য বর্ণন শরৎচন্দ্রের এই কাহিনী।



২. মেজদিদি

মেজদিদি কেষ্টর আপন মায়ের পেটের বোন নন কিন্তু তার চেয়ে বহু অধিক। ভালবাসতেন প্রাণের চেয়ে অধিক। এক নারীর ত্যাগ, তপ, আর মমতার এক ওতোপ্রোতো কাহিনী।



৩. বড়দিদি

১৩১৪ সালে ভারতী পত্রিকায় নাম গোপন করে দু কিস্তি প্রকাশ হলে কেউ ভাবতে পারেন নি  এর লেখক পরবর্তী কালে এক তুমুল জনপ্রিয় লেখক হয়ে উঠবেন। যা নিয়ে স্বয়ং শরৎচন্দ্র পরবর্তী কালে বলেছিলেন - ওটা আমার বাল্যকালের। রচনা ছাপানো না হলেই বোধহয় ভালো হতো। ‘বড়দিদি ও এক মমতা ময়ী নারীর অশ্রুজলে ভেজানো শরৎচন্দ্রর এক মর্মকাহিনি।



৪. পন্ডিত মশাই

গল্লটিতে আছে দুই স্বাভীমানী নারী, পুরুষের কথা, যারা পতি পত্নীও বটে। উভয়ে এক কারণবশত দূরে। কাছে আসতে চান অথচ এক টানাপোড়েনে তা সম্ভব হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত নানা নাটকীয় ঘটনা সংঘটিত হয়ে উপসংহারে তা সম্ভবপর হয়।



৫. পরিণীতা

বাংলা সাহিত্যে থেকে যদি শরৎচন্দ্রকে সরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে যা থাকে তা না থাকার মতই। ভারতীয় তৎকালীন সমাজে ছড়ানো যত কুরীতি ও দুর্বলতা গুলি সব কিছু বর্ণিত এই উপন্যাসে। ভারতীয় নারীর বাহ্যরুপ ও তার অন্তর্নিহিত আন্তরিক সৌন্দর্য, তার মনোভাবনার চিত্রন, যে ভাবে শরৎচন্দ্র করতে পেরেছেন ভারতীয় আর কোনো ঔপন্যাসিকরা তার ধারে কাছেও আসতে পারেন নি।


শরৎচন্দ্র নারী চরিত্র কে যতো নিকর হতে দেখেছেন সে দৃষ্টি ভারতীয় ভাষার অন্য উপন্যাসকার গনের ছিল না।
শরৎচন্দ্রর প্রত্যেক উপন্যাসে প্রত্যেক নারী চরিত্র জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা সমস্যা আর তার অন্তর্দ্বন্দ্বের ভাবে সজীব চিত্র কলা যেন।


ললিতার সঙ্গে তার বিবাহ অসম্ভব এটা জেনেই শেখর তার আশা ত্যাগ করেছিলো।
কিছু দিন শেখর ভয়ে ভয়ে ছিল যেন ললিতা তাদের এক পুতুলের বিয়ের অবকাশে তাদের মালাবদলের বৃত্তান্ত প্রকাশ না করে দিক, এই রকম পরিস্থিতিতে। এই ভেবেভেবেই তার হৃদয় থাকতো উদবেলিত।


উপসংহারে মিলন বেলায় শেখর মনে মনে গিরীন এর মহানুভবতা মনে প্রাণে স্বীকার করেছিলো।



৬. শ্রীকান্ত

মানা হয় বাংলা সাহিত্যের এক শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হলো। শ্রীকান্ত এটি ফিল্ম ও টিভি সিরিয়াল হয়েছে। বলা হয় নায়ক চরিত্রটি স্বয়ং শরৎচন্দ্র। কাহিনী টি বর্ণিত হয় নায়কের নিজের মুখে তাই পাঠকের সর্বদা এক কৌতুহল থাকে পরে কি হবে!


চার খন্ডে প্রকাশিত এই উপন্যাস প্রথমে লেখকের নাম হিসাবে ছিল
শ্রীকান্ত শর্মা’ নামেজনপ্রিয়তার কারণে শ্রীকান্ত পঞ্চম পর্ব হবে কি না প্রশ্ন উঠেছিলো কিন্তু শরৎচন্দ্র আগে আর লিখতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন - আমি খুব যত্ন করে মন দিয়ে শ্রীকান্ত লিখেছি, হৃদয়বান পাঠকের ভালো লাগবে ভেবে। সঙ্গে এ কথাও বলেছিলেন, এ বই ছাপা হোক তা তিনি চান নি



৭. দেবদাস

সব চেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস। উল্লেখযোগ্য শ্রীকান্ত ও দেবদাস দুটি রচনাই একশো বছর পার করলো। যাইহোক, দেবদাস পাঠ করে কত তরুণ তরুণী যে নিজেদের দেবদাস আর পারু ভেবেছে তার ইয়ত্তা নেই।


আর বোধহয় কোনো উপন্যাস নেই, যা এমন প্রেমের নিদর্শ
তৈরী করেছে! দেবদাস ও পারুর এমন মার্মিকতা আর দ্বিতীয় কোনো গল্পে নেই। কাহিনীরি চলচিত্র রুপায়ণেও রেকর্ড ব্রেক করেছে ও ভারতীয় বহু ভাষাতে দেবদাস চিত্রিত হয়েছে


এই গল্পে শরৎচন্দ্র নায়ক নায়িকার দুঃখ, দরদ কে পাঠক তথা মানুষের মনে উজার করে ঢেলে দিয়ে যেন মনের মধ্যে ছেপে দিয়েছেন!



৮. চরিত্রহীন

শরৎচন্দ্র পাঠকের মস্তিষ্ক নয়, তার মন কে বেশী ছুঁয়ে তার হৃদয় উদ্বেলিত করেছেন। কথা কাহিনীর এমন বিস্তারিত নির্মাণ যে তার মর্মরতা যেন মনে ভিতর পর্যন্ত ছিঁড়ে খুরে ভেদ করে দিতো! তা যেন দীর্ঘকালীন সময় ধরে তার থেকে মুক্ত হতে দিতো না।সতীশ, উপেন্দ্র, দিবাকর, সুরবালা আর কিরণময়ীদের নিয়ে এক ভাব বিভোর কাহিনী বোনা হয়েছে চরিত্রহীন এ।



৯. পথের দাবী

বইটি প্রকাশ হওয়ার কিছুদিন পরেই তৎকালীন ইংরেজ সরকার বইটি রাজদ্রোহমুলক বিবেচনা করে বাজেয়াপ্ত করে। সরকার, লেখক, প্রকাশক, মুদ্রক কাউকে কিছু না বলে বইটির প্রচার বন্ধ করে দেয়। বইটি রাজরোষ হতে মুক্ত হয় শরৎচন্দ্রর মৃত্যুর পর ১৯৩৯ সালে। তখন এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।



১০. শেষ প্রশ্ন

এই বইটি প্রকাশিত হলে কিছু প্রগতিপন্থী চিন্তাশীল ব্যক্তি লেখক কে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ও তেমনি কিছু হিন্দুসমাজের গোঁড়ার দল এই লেখা পড়ে শরৎচন্দ্রর প্রতি নিন্দায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন। অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলেন। প্রকাশকের প্রতি রুষ্ট ও ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন।


শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় য়ের রচনাসমুহ হিন্দি তো বটেই বহু ভারতীয় ভাষাতে অ
নূদিত হয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392