চাকরির বাজারে হতাশার কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মুখ ঘুরিয়ে ডাক্তারি পেশায় ঝোঁক

ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন প্রবণতা: ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মুখ ঘুরিয়ে ডাক্তারি পেশায় ঝোঁক। কারণ কি? এই আর্টিকেলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির প্রবণতা, খরচ, এবং ভবিষ্যৎ।

Mar 30, 2024 - 10:30
Mar 30, 2024 - 00:49
 0  13
চাকরির বাজারে হতাশার কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মুখ ঘুরিয়ে ডাক্তারি পেশায় ঝোঁক
চাকরির বাজারে হতাশার কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মুখ ঘুরিয়ে ডাক্তারি পেশায় ঝোঁক | প্রতীকী ছবি

কলকাতার ছাত্র হঠাৎ নিজের পাঠ্যক্রম বদল করেছে সে কলকাতা থেকে দশম ক্লাস শেষ করে দিল্লী গেছে। সেখানে আইআইটি প্রার্থীদের মক্কা বলে কথিত একটি স্কুলে ভর্তি হয়। সে যেহেতু জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ইঞ্জিনিয়ারিং (কম্পিউটার) কোর্সে ভর্তি হবার যোগ্য নং পায়নি, তাই তাকে নিতে হলো কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।


ছেলেটির কথা অনুসারে সে প্রযুক্তি বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পড়তে একেবারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। সেই জন্য প্রথম সেমিষ্টার শেষ করেই সে সটান গৃহে প্রত্যাবর্তন করেছে তারপর কলকাতার আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পাশ করে সুযোগ পেয়েছে হায়দ্রাবাদে দেশের এক নং বিজনেস স্কুলে স্নাতকোত্তর শেষ করার।


কয়েক দশক আগে এক নতুন প্রবণতা বা ঝোঁক দেখা গিয়েছিলো। সেটি হলো, বিশেষ করে আইআইটি থেকে পাশ করে শিক্ষাক্রম থেকে কিছু মেধাবী ছেলে বেছে নিচ্ছে সাংবাদিকতা বা লেখক বৃত্তি। না এ সব করে অর্থাৎ লিখে সমাজব্যবস্থা বদলের কোন ইচ্ছা নয়, সে দুরাশা কারও ছিল না। বিশেষ করে উল্লেখিত ছেলেটি চেয়েছিল আইনের স্বচ্ছ দৃষ্টি দিয়ে আয়ত্ত করা ব্যবসার কাজ।


সে ভাগ্যবান।
তার পরিবারের লোক বুঝে নিযেছিলো তার মনের কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যাপারটা অতো সহজ নয়। কোর্সের মাঝখান থেকে পড়া বন্ধ করে, সেটা অভিভাবক বা ছাত্র উভয়ের ক্ষেত্রে, অন্য জায়গায়, অন্য কোর্সে ভর্তি হওয়াটাকে বড়রা এক চরম বিলাসিতা বলে মনে করেন।


তার কারণ, বিশেষ করে ভারত এর মতো এক দরিদ্র দেশে, যেখানে তার সন্তানের শিক্ষা তার পরিবারের কাছে জীবন মরণের প্রশ্ন। এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি ও চিকিৎসকের পেশা-এ-ই দু-ই হলো ভারতীয় তরুণ দের ভবিষ্যতের প্রধান আশা ও অবলম্বন।


অবশ্য ২০১৫ সাল থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রসংখ্যা কমতির দিকে যা পাঁচ বছরে ৩৪ লক্ষ থেকে কমে প্রায় ২৪ লক্ষ হয়েছে। কারণ উৎপাদনে তৈরীর রুপান্তর (ক্রমাগত বর্ধনশীল অটোমেশন)।


কলকারখানায় চাকরির সুযোগ থিতিয়ে যাওয়ার পরেও কোনও কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে নাম লেখানোটা এখনো অবশ্য
করণীয়।


তবে ডঃ হওয়ার তাড়না তীব্র হচ্ছে উত্তরোত্তর। হয়তো এর মূল কারণ একজন চিকিৎসকের কাছে স্বাধীন বৃত্তি নির্বাহের অবাধ সুযোগ থাকে। ভারতে শিল্প, বাণিজ্য বিবর্তন হলেও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দাতা শ্রেণীর তেমন উদ্ভব হয়নি।


কিন্তু ডঃ চেম্বার কোথায় নেই? তা নামজাদা হাসপাতাল, কি সরকারি চিকিৎসালয় বেসরকারি নার্সিংহোম বা ডঃ বাবুর নিজস্ব আবাসই না হোক গ্রামে গঞ্জেও গমগম করছে প্রাইভেট বিশেষজ্ঞদের পসার!


চোখ, হার্ট, ফুসফুস, স্ত্রী রোগ, দাঁত- আজকাল কোনও স্পেশালিষ্টের অভাব নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় বেসরকারি মূলধনের অনুপ্রবেশে চাকরি টাল খেয়েছে। কিন্তু ডাক্তারিতে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে অনেক দুর নিয়ে গেছে বেসরকারি বিনিয়োগ। এর কারণ অপ্রতিরোধ্য চাহিদা।


২০১৮-১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত গড়ে বছর পিছু মেডিক্যাল আসন প্রায় আশি হাজার, কিন্ত ভর্তির সর্বভারতীয় পরীক্ষা এনইইটি তে-পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাত লক্ষ। সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন এমবিবিএস কোর্সের জন্য অর্ধেকের একটু কম হলেও অবাক কান্ড হতে হবে দন্ত বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে।


সেখানে বিডিএস পড়ানো হয় এমন সরকারি সংস্থা আসন মাত্র ২,৯৩০টি। কিন্তু প্রাইভেট সংস্থায় তা ২৪,১৩০টি তার উপর বিদেশে পাঠরত ডাক্তারি ছাত্র। তাদের সংখ্যাও প্রায় ২৫,০০টি দেশের শ্রেষ্ঠ ছাত্রেরা অবশ্যই প্রতিযোগিতা মুলক পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে সরকারি কলেজে আসন অধিকার করবে। বেসরকারি কলেজে আসন বেশি।


কিন্তু সেখানে অপেক্ষাকৃত নিরেস ছাত্ররা বিপদে পড়বে, যদি না থাকে অর্থের জোর। ওই সব কলেজে সাড়ে পাঁচ বছরের কোর্সে, টিউশন ফি-ই লাগবে অন্ততো ৭৫ লক্ষ টাকা। তারও পর বিবিধ আনুসঙ্গিক। স্নাতকোত্তর করার খরচও ২৫ বা ৩০ লক্ষ।


অন্য দিকে ইউক্রেন, রাশিয়া, বা চিনে পড়ার খরচ অনেক কম। এমবিবিএস পর্যন্ত পড়তে ভারতীয় প্রাইভেট কলেজের তুলনায় অনেক কম। এই যে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে লক্ষাধিক ভারতীয় ছাত্র ডাক্তার হওয়ার ব্রত নিচ্ছে সেটিই কি তাদের জীবনের অভীপ্সা?


তাদের মনের গঠন কি রোগী সেবার পক্ষে উপযুক্ত? নাকি শুধু অর্থোপার্জনের জন্য গলায় স্টেথোস্কোপ! চিকিৎসক ছাড়া আর কারও কাছে জীবিকার সঙ্গে সেবা এতো জরুরী নয়। যে আর্থিক জোরে মেডিক্যাল কলেজে আসন পেয়েছে সে রোগীর সঙ্গে কেন দুর্ব্যবহার করে!


সাধারণ ক্ষেত্রে তার বিবেচনা ক্ষমতা কোন পর্যায়ের! রোগীর কথা শোনার ধৈর্য বা ভাষা জ্ঞান তার আছে তো? ডাক্তারি স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য প্রার্থীর মানসিক ক্ষমতা ও ভারসাম্য্য বিচার করে দেখা হয় আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অষ্ট্রেলিয়ায়।


ভারতে ভাবী ডাক্তারের মানসিক ভারসাম্য বাজিয়ে দেখা হয় না বলেই চিকিৎসালয় চত্তরে এতো হানাহানি ও চিকিৎসক সম্বন্ধে এতো অভিযোগ। এটা দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর।


তথ্যসংগ্রহ: সুমিত মিত্র 

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392