সবুজে ঘেরা বগুড়ার ‘কড়ই গ্রাম’

কড়ই গ্রামের বহু পুরাতন একটি রাজবাড়ি আছে। এই গ্রামের রাজবাড়ীর ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি রাজার ইতিহাস। এখন আমি আপনাদের জানাবো এই প্রাচীন ইতিহাস। এ গ্রামের রাজার নাম ছিল, শ্রী কৃষ্ণ কড়ই। তিনি ছিলেন অত্যন্ত্য প্রভাবশালী রাজা। সেই সাথে ছিলেন খুব বিলাসবহুল। অতিরিক্ত বিলাসিতার কারনে এই রাজার অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে। যার কারণে কর দিতে পারতেন না।

Dec 29, 2023 - 23:30
Dec 29, 2023 - 17:20
 0  64
সবুজে ঘেরা বগুড়ার ‘কড়ই গ্রাম’
সবুজে ঘেরা বগুড়ার ‘কড়ই গ্রাম’

রাজশাহী বিভাগে বগুড়া জেলার অন্তর্গত আদমদীঘি উপজেলার কুন্দগ্রাম ইউনিয়নের একটি নিভৃত গ্রাম কড়ই। কড়ই গ্রাম কুন্দগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচ নাম্বার ওয়ার্ড। কড়ই গ্রাম বগুড়া জেলার একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম। এই গ্রামের পশ্চিম পাশে নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা পারোইল ইউনিয়নে অবস্থিত। পূর্ব প্বার্শে বিস্তীর্ণ মাঠ এবং উত্তর প্বার্শে বশিকোড়া গ্রাম দক্ষিণ প্বার্শে আদমদিঘী উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়ন অবস্থিত।


কড়ই গ্রামের পরিচিতি

কড়ই গ্রামের কয়েকটি পাড়া রয়েছে, কড়ই দারার পাড়া, কড়ই সাহানা পাড়া, কড়ই সরকার পাড়া, কড়ই আকন্দ পারা ও কড়ই হিন্দু পাড়া কড়ই গ্রামের কেন্দ্র বিন্দু কড়ই বাজার। তাছারাও কড়ই গ্রামের একটি ক্লাব আছে। ক্লাবটির নাম কড়ই কাবেলাবাদ সংসদ


কড়ই গ্রামের মোট পাঁচটি মসজিত আছে। একটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ আছে যার নামকরণ করা হয়েছে কড়ই গ্রামের প্রাচীন স্থাপনা কড়ই রাজবাড়ীর নাম অনুসারে মসজিদটির নাম, কড়ই কেন্দ্রীয় রাজবাড়ী জামে-মসজিদ। কড়ই গ্রামের দুইটি ঈদগাহ মাঠ রয়েছে একটি কড়ই কেন্দ্রীয় ঈদগাহ নামে পরিচিত, যা কড়ই বাজারে অবস্থিত।


এটি ৯ শতাংশ জমির উপর অবস্থিত কড়ই কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের জমি দাতা কড়ই গ্রামের কৃতি সন্তান এসেসটেন্ট প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ শাফিউল আলম (নশরতপুর ডিগ্রি কলেজ)। পর ঈদগাহ মাঠটি অবস্থিত কড়ই সরকার পাড়ায়


এছাড়াও এই গ্রামের একটি পোস্ট অফিস রয়েছে। পোস্ট অফিস এর নাম কড়ই কাবেলাবাদ পোস্ট অফিস, পোস্ট কোড - ৫৮৯২।


কড়ই গ্রামের প্রাচীন স্থাপনা

কড়ই গ্রামের বহু পুরাতন একটি রাজবাড়ি আছে। এই গ্রামের রাজবাড়ীর ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি রাজার ইতিহাস এখন আমি আপনাদের জানাবো এই প্রাচীন ইতিহাস এ গ্রামের রাজার নাম ছিল, শ্রী কৃষ্ণ কড়ই। তিনি ছিলেন অত্যন্ত্য প্রভাবশালী রাজা। সেই সাথে ছিলেন খুব বিলাবহুল অতিরিক্ত বিলাসিতার কারনে এই রাজার অর্থনৈতিক অবস্থা অবনতি ঘটে। যার কারণে কর দিতে পারতেন না।


শ্রীকৃষ্ণ রাজার অবস্থা এমন পরিতি ঘটে যে, শেষে তিনি রাজ্য ছেড়ে রাজবাড়ী ছেড়ে যেতে বাধ্য হোন। তারপর থেকে এ গ্রামের রাজবাড়ী তে আর কেউ বসবাস করে না। আস্তে আস্তে রাজবাড়ীর স্থাপনা গুলো নষ্ট হতে থাকে, নষ্ট হতে থাকে রাজার ঐতিহ্য, সেই সাথে রাজার নাম। তারপর সরকারি ভাবে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারনে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এখন বর্তমানে দুটো স্থাপনা রয়েছে যা বসবাসের উপযোগী নয়।



কড়ই গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

কড়ই গ্রাম একটি শিক্ষাবান্ধব গ্রাম এই গ্রামের চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার জন্য গ্রামের ছেলে মেয়েদের খুব ভাল হয়।


১. কড়ই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

২. কড়ই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

৩. কড়ই আলিয়া মাদ্রাসা


কড়ই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

কড়ই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ গ্রামের অনেক ছেলে মেয়েদের এ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু কড়ই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সুন্দর ভবন আছে। বিদ্যালয়ের পাশে বা্চ্চাদের খেলা করার জন্য একটা সুন্দর জায়গা আছে, বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা করে।


বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান হয়, সেখানে গ্রামের বাচ্চারা অংশ গ্রহণ করে এই বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের সুন্দর ভাবে আনন্দের সাথে পাঠদান করানো হয়।


কড়ই মোহাঃ কাবেল উচ্চ বিদ্যালয়

কড়ই উচ্চ বিদ্যালয়, কড়ই গ্রামের একটা সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কড়ই মোহাঃ কাবেল উচ্চ বিদ্যালয়প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সদস্য বৃন্দ শিক্ষা পৃষ্ঠপোষকতা সম্পূর্ণ ব্যক্তি। তাদের চৌস পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক দুর এগিয়ে গেছে বিদ্যালয়ের শতকরা পাশের হারও অনেক এগিয়ে


এই বিদ্যালয়ে বাষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী সতস্ফুর্ত ভাবে অংশ গ্রহণ করে। গ্রামের ছাত্রছাত্রী অনেক বেশি


কড়ই আলিম মাদ্রাসা

এবার আমি আপনাদের জানাবো কড়ই আলিম মাদ্রাসা সম্পর্কে কড়ই আলহাজ্ব আশরাফুন নেছা, আলিম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিতা মেজর জেনারেল গোলাম মাওলা। মেজর জেনারেল গোলাম মাওলার মাতার নামে এই প্রতিষ্ঠান টির নামকর করা হয়। তাঁ মাতার নাম ছিল আশরাফুন নেছা। তাই আশরাফুন নেছার নাম অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় কড়ই আলহাজ্ব আশরাফুন নেছা আলিম মাদ্রাসা।


এই মাদ্রাসার সুদক্ষ অধ্যক্ষ মাওলা মোঃ আবদুস সামাদের চৌস পরিচালনাই প্রতিষ্ঠানটি অনেক এগিয়ে তার সুদক্ষ পরিচালনাই এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েকবার উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কার লাভ করে কড়ই মাদ্রাসা সরকারি ভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয় মাদ্রাসা ভিতরে একটি মাঠ রয়েছে, চারদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরানো। সেখানে ছাত্রছাত্রী রা খেলাধূলা করে, গল্প করে। কড়ই আলিম মাদ্রাসা পড়াশুনার মান অনেক ভাল।


কড়ই গ্রামের জনসংখ্যা

কড়ই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজারের বেশি এই গ্রাম হিন্দু-মুসলিম উভয় বসবাস করেন। এর মধ্যেই প্রায় দুই হাজার দুইশত জন মুসলিম আর আনুমানিক আটশত জন সনাতন ধর্মাবলম্বী লোক বসবাস করেন।


কড়ই গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা

ই গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থায় আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এ গ্রামের মানুষ অনেক পরিশ্রমী এ গ্রামের শতকরা ২০% মানুষ উচ্চ পর্যায়ে, আর ৬০% লোকের অর্থনৈতিক অবস্থা মধ্যবিত্ত, আর ২০% লোক নিম্নবিত্ত। কড়ই গ্রামের বেশিভাগ মানুষ কৃষক, তারা কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল।


শতকরা ৮৫% লোক কৃষি কাজ করেন। আর ৫% লোক চাকরিজীবী এর মধ্যেই আবার অনেকে সরকারি চাকরি করেন আাবর অনেকে বেসরকারি। এ গ্রামের জমির মাটি খুব উর্বর, এখানে খুব ভাল ফসল জন্মায় সবচেয়ে বড় কথা এই যে, এটি একটি উঁচু গ্রাম


কড়ই গ্রামের উন্নয়ন প্রকল্প

এই গ্রামের আারও একটি উন্নয়নের কথা না বললেই নয়, তা হলো বিদ্যুৎ কড়ই গ্রামের বিদুৎ আসে ১৯৮৬ সালে। বিদ্যুৎ আসার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান মেজর জেনারেল গোলাম মাওলা, তিনি সর্বপ্রথম এখানে বিদ্যুৎতের ব্যাবস্থা করেন যা কড়ই গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থায় বেশি উন্নত করে।


কড়ই গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক উন্নত, গ্রামের ভিতর দিয়ে গেছে পাকা রাস্তা, গ্রামের অলিতে-গলিতেও হয়েছে ইট সোলিং রাস্তা।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow