শিক্ষা হোক আনন্দের, শিক্ষা নয় বৈষম্যের
দেশের শিক্ষক সমাজ এমন একটি পেশা বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর এ প্রক্রিয়ার নাম হচ্ছে শিক্ষা দান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটিয়ে শিক্ষার্থীকে মানবিক করে তোলে। একটি পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষক শিক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে দক্ষ মানব সম্পদে পরিনত করে।
প্রথম প্রকাশ: ২২ জুলাই, ২০২৩
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছরটা শুরু হয়েছিল অনেক আশা নিয়ে। বিশেষ করে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন এবং বেসরকারি শিক্ষকদের দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি সুখবর পেশ করবেন।
২০২০ সাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, এই বছরটিকে তৃণমূল থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার কারণে সীমিত পরিসরে ‘মুজিব বর্ষ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
দেশের শিক্ষক সমাজ এমন একটি পেশা বা প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত যার মাধ্যমে একটি দেশ এগিয়ে যায়। আর এই প্রক্রিয়ার নাম শিক্ষা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভা আবিষ্কার ও বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে মানবিক করে তোলেন। পূর্ণাঙ্গ মানুষ করে তোলে।
একজন শিক্ষক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটান এবং তাদেরকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করেন। সুন্দর ভবিষ্যৎ ও সুন্দর নাগরিক গড়ে তোলাই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। যা অর্জনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি প্রকৃত খাঁটি ব্যক্তিতে পরিণত হয়।
একজন মানুষ মনুষ্যত্বের অধিকারী হয় এবং তার মনের পাপ দূর করে সত্য ও ন্যায়ের বোধ জাগ্রত করে। আলো, বাতাস ও স্বাদ থেকে বঞ্চিত মানুষের মানবিক মূল্যবোধ অর্জনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন একজন শিক্ষক। তাই প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিই দেশের সম্পদ। তাই শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই একটি জাতির শক্তি।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে মানসম্মত শিক্ষাই শিক্ষার সব ধরনের বৈষম্য দূর করার চাবিকাঠি। এই মানসম্মত শিক্ষার প্রথম ধাপ হলো সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল মানসম্মত শিক্ষা ও বিশ্বমানের নাগরিকের জন্য সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে এক স্তরে উন্নীত করার।
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। তিনি ধাপে ধাপে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রের আওতায় আনতে চেয়েছিলেন। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি কোনো বিভাজন রাখতে চাননি। শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে বঙ্গবন্ধু বিশ্বমানের ও দক্ষ নাগরিক তৈরি করতে চেয়েছিলেন যাতে শিক্ষকদের আর্থিক সংকটে পড়তে না হয়।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্ষেত্রে যে ইতিহাস পাল্টেছে তা সবারই জানা। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্যের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরে বৈষম্য। শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর ২০২০ সালে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
শিক্ষার্থীর মানসিকতায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তবে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট সহ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে শহরের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হলেও গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা খুব একটা লাভবান হয়নি।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে কারিকুলাম সংশোধন, পরীক্ষা পদ্ধতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি সংস্কার, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবে সব ধরনের শিক্ষাকে এক লাইনে আনতে সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি কোনো বিভাজন থাকা উচিত নয়। কারণ, বিভক্তি থাকলে বৈষম্য থাকবেই।
শিক্ষাক্ষেত্রে এই বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হবে না, দক্ষ ও বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি হবে না। কারণ, কোনো পেশায় বৈষম্যের ধারণা গেঁথে গেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ধারা হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে মানসম্মত শিক্ষাই শিক্ষার সব ধরনের বৈষম্য দূর করার চাবিকাঠি। এই মানসম্মত শিক্ষার প্রথম ধাপ হলো সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল মানসম্মত শিক্ষা ও বিশ্বমানের নাগরিকের জন্য সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে এক স্তরে উন্নীত করার।
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। তিনি ধাপে ধাপে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রের আওতায় আনতে চেয়েছিলেন। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি কোনো বিভাজন রাখতে চাননি। শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে বঙ্গবন্ধু বিশ্বমানের ও দক্ষ নাগরিক তৈরি করতে চেয়েছিলেন যাতে শিক্ষকদের আর্থিক সংকটে পড়তে না হয়।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্ষেত্রে যে ইতিহাস পাল্টেছে তা সবারই জানা। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্যের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরে বৈষম্য। শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর ২০২০ সালে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
শিক্ষার্থীর মানসিকতায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তবে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্টসহ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে শহরের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হলেও গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা খুব একটা লাভবান হয়নি।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে কারিকুলাম সংশোধন, পরীক্ষা পদ্ধতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি সংস্কার, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবে সব ধরনের শিক্ষাকে এক লাইনে আনতে সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি কোনো বিভাজন থাকা উচিত নয়। কারণ, বিভক্তি থাকলে বৈষম্য থাকবেই।
শিক্ষাক্ষেত্রে এই বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হবে না, দক্ষ ও বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি হবে না। কারণ, কোনো পেশায় বৈষম্যের ধারণা গেঁথে গেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ধারা হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার।
মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা। রাজ্যের সব শিশু একইভাবে, একইভাবে বেড়ে উঠবে। দেশের সকল শিক্ষা একই পথে চলবে। শিক্ষায় কোনো বিভাজন থাকবে না। গর্বিত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা গড়ে তুলবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষা কোনো পণ্য বা ব্যবসা নয়। কিন্তু বাস্তবে এটাই ঘটেছে।
কারণ একদিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের সরকার অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি, এমপিওভুক্ত না হওয়া (যদিও কেউ কেউ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না)। এসব বিষয় শিক্ষকতা পেশায় বৈষম্য ও বিভাজন আরও প্রকট করে তুলেছে। একই সিলেবাসে পাঠদান করলেও বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষকদের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
শিক্ষায় এই বৈষম্য দূর করা এখন সময়ের দাবি। কারণ একই দেশে একই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা থাকা বাঞ্ছনীয়। আর তা না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষায় বৈষম্য থাকবে যা মোটেও কাম্য নয়। সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে রাষ্ট্রের আওতায় এনে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে একটি অভিন্ন কাঠামোর আওতায় আনা গেলেও মেধাবী তরুণরা শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিতে আগ্রহী হবে। আর তখনই হবে গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা যা বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি করবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। করোনার পরও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তিনি দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তাসহ নানা পদক্ষেপ নেন, যা বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে সম্প্রতি প্রায় ৭০ হাজার ভূমিহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
ছবি: Image by Freepik
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?