২.৮৩ নিয়ে স্নাতক পাস অতঃপর প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত

স্নাতকে ২.৮৩ নিয়ে পাস করে শরিফুল্লাহ এর পর ৪১ তম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ। শরিফুল্লাহ এর অদম্য মানসিকতা নিয়ে বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডার। শরিফুল্লাহ এর জীবনে ঘটে যাওয়া মুহুর্ত। এই ব্যাপারে জানতে পোস্ট টি পড়ুন।

Feb 11, 2024 - 13:00
Feb 11, 2024 - 18:05
 0  38
২.৮৩ নিয়ে স্নাতক পাস অতঃপর প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত
২.৮৩ নিয়ে স্নাতক পাস অতঃপর প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত

ইচ্ছা শক্তি এবং মনোবল যদি থাকে দৃঢ় তাহলে কোন বাধাই তাকে আটকাতে পারে না তারই প্রমাণ দিল শরিফুল্লাহ। শরিফুল্লাহ এর পছন্দের বিষয় ছিল পদার্থবিজ্ঞান। পদার্থবিজ্ঞানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরেও চাকুরীর বাজারে রসায়নের প্রাধান্য বেশি থাকায় তিনি রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার পরই তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। মূলত ল্যাব ক্লাসের সঙ্গে নিজেকে ঠিকমতো মানিয়ে নাও নেওয়ার কারণে তিনি প্রথম বর্ষে অনেক খারাপ রেজাল্ট করেন। এর পরবর্তী সময়ে তিনি আর সি জিপিএ বাড়াতে পারেননি। সবশেষ তিনি ২.৮৩ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক পাস করেন। এবং স্নাতকোত্তর পাস করেন ২.৯০ সিজিপিএ নিয়ে।


মোহাম্মদ শরিফুল্লাহ ৪১ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে এর পাশাপাশি তিনি মেধা ক্রমে ৬৯ তম হয়েছেন। তিনি জানান তার এই সিজিপি এর বিষয়টি হয়তোবা ভাইবা বোর্ডে তার জন্য একটা খারাপ দিক হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু তাকে ভাইবা বোর্ডে সিজিপিএ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করা হয়নি বলে জানান তিনি এবং এর প্রতিক্রিয়াও পড়েনি তিনি জানান। তিনি জানান তার প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার। তিনি জানেন ভাইবা বোর্ডে তাকে প্রায় ২৭ মিনিটের মত বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমাকে যে সকল প্রশ্ন করা হয়েছিল মূলত সব প্রশ্নের উত্তর অনেক ভালোভাবে দিতে সক্ষম হয়েছি। ভাইবা পরীক্ষা অনেক ভালো হয় আমি এ ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী ছিলাম।”


২০১৭ সালে স্নাতক পাস করার পর মাত্র এক মাসের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি ৩৭ তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন বলে জানাই। প্রস্তুতি খুব একটা ভালো না থাকায় সে বছর তিনি প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলেন না। সেখানে তিনি হিসাব মিলিয়ে দেখেছিলেন আর মাত্র ৪-৫ নম্বর পেলেই হয়তো তিনি প্রিলিমিনারিতে টিকতে পারতেন এরপর তিনি জানেন ২০১৭ সাল থেকে অনেক ভালোভাবে তিনি প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করেন। ২০১৭ সালের পর থেকে তুমি একটা বিষয়ের উপর একাধিক পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন করে পড়াশোনা করা শুরু করেন। ৪৪ তম বিসিএসে তিনি দেখেন বাজারে প্রায় সব বই তিনি পড়ে ফেলেছেন। এবং তিনি আরো বই কিনে ফেলেছেন


তিনি জানান তিনি যখন কোন কারনে ঢাকায় যেতেন আসার সময় আমার সাথে আলাদা করে বইয়ের একটি ব্যাগ থাকতো। আবার স্কুল পর্যায়ে আমার কিছু সমস্যা ছিল সেগুলো আমার মুখস্ত হতো না তাই আমি একটি বিষয় ১০ থেকে ১২ বার পড়তাম। তারপর দেখতাম সে বিষয়টি মুখস্ত হয়েছে আমি আলাদা করে কোন কোচিং করিনি বিধায় একাধিক বই আমার আয়ত্তে নিয়ে আসতে পেরেছি। বাংলা সাহিত্য নির্ভর যেগুলো নাটক সিনেমা রয়েছে সেগুলো দেখেছি আমি মূলত বাংলা সাহিত্য কে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার লক্ষ্যেহায়ার লেভেলের ম্যাথ অনুশীলন করেছি গণিতকে আয়ত্তে আনার জন্য। বিজ্ঞান আয়াতে আনার জন্য আমি ইন্টারনেট ভিত্তিক পড়াশোনা করেছি। ইংরেজিতে ভালো করার উদ্দেশ্যে নিয়মিত অনলাইন ভিত্তিক ইংরেজি পত্রিকা পড়তাম। বাংলাদেশের বিষয়াবলী নিজের আয়ত্তে আনার জন্য জাতীয় বিষয়াবলীর একটি সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগিয়ে পড়েছি।”


শরিফুল্লাহ ৪১তম বিসিএসে চতুর্থতম বিসিএস। এর আগে ২০২১ সালে ৩৮ তম বিসিএসে তিনি নন ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ পেয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক একটি পানি পরীক্ষাগারে ল্যাব ইন চার্জ হিসেবে কর্মরত অবস্থায় আছেন


তিনি জানান মূলত ৩৮ তম বিসিএস নিয়ে তিনি অনেকটা আশাবাদী ছিলেন। এ ব্যাপারে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তুমি ৩৮ তম বিসিএসে ক্যাডার পদে নিযুক্ত হবেন। কিন্তু পিএসসি থেকে যখন নম্বর পত্র তুলি সেখানে ৫৭১ নম্বর পেয়ে
ছে। এই নাম্বার নিয়েই অনেকে সেবার প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডার পেয়েছিল। তিনি জানায় ৩৮ তম বিসিএসে ৫৭১ নম্বর পাওয়ার পর তার মনোবল অনেকটাই বেড়ে যায়


তিনি জানান 
তার টানা বিসিএস দেওয়ার পেছনে রয়েছে ৩৮তম বিসিএস এর নাম্বার পাওয়ার বিষয়টি এ নাম্বার দেখে সব বন্ধুরা বলতো আমি বিসিএস ক্যাডার পদ পাবো। এরপর থেকে মূলত আমি আরো বেশি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি।  এরপর ২০২১ সালের ৪১ তম বিসিএসে প্রিলিমিনারিতে টিকি। তবে ৪১ তম বিসিএস এ চাকুরি করার জন্য পড়াশোনা করার মতো অতটা সময় পাওয়া যায়নি লিখিত পরীক্ষার জন্য অনেক কম সময় পেয়েছিলাম। কিন্তু চাকরি করার পাশাপাশি যে অল্প সময় পেয়েছি সেই সময় আমি কাজে লাগিয়েছি এবং পড়াশোনা করেছি


শরিফুল্লাহ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে অফিসার এবং সিনিয়র অফিসার পদে চাকরি পেয়েছিলেন বলে জানান। এবং সেখানে তিনি তিন বছর চাকরি করেছেন। তিনি জানান ২০১৮ সালের ব্যাংকে চাকরিতে ঢোকার পর তিনি অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন
তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে তিনি অন্য কোন সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন। তিনি জানেন সেখানে তার ফুল টাইম চাকরি করে বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি নিতে অনেকটাই কষ্ট করতে হয়েছে।


 
দৃঢ় মনোবল যে মানুষকে কতটা উন্নতির শিখরে তুলে নিয়ে যেতে পারে তাহলে তো শরিফুল্লাহ এর এমন ফলাফল দেখে বোঝা যায়। স্নাতক এ ২.৮৩ পাওয়ার পরেও তিনি মনে বল হারায়নি ৩৮ তম বিসিএস এ টিকার পর তিনি ৪১ তম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেনযা মূলত তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং কঠোর পরিশ্রমের অর্শ রোগ তার কাছে ধরা দিয়েছে। কটার পরিশ্রমের ফলে জীবন পরিবর্তন করা যে সম্ভব তাহলে তো শরিফুল্লাহ নিজে প্রকৃষ্ট একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: বুলবুল আহমেদ ছাত্র, আজিজুল হক কলেজ