ব্লগিং জগতে দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের জন্য ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ১১টি টিপস

এই ব্লগ পোস্টে, একজন অভিজ্ঞ ব্লগার দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য অর্জনের জন্য ১১ টি টিপস শেয়ার করেছেন। লেখক ইংরেজিতে ব্লগিং করার পরামর্শ দেন, কাস্টম ডোমেইন এবং হোস্টিং ব্যবহার করেন, নিয়মিত উচ্চমানের কন্টেন্ট প্রকাশ করেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। ওয়েবসাইটের কর্মক্ষমতা ট্র্যাক করার জন্য Google সরঞ্জাম ব্যবহার করা এবং গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করাও গুরুত্বপূর্ণ। SEO এর পরিবর্তে উচ্চমানের কন্টেন্ট তৈরির উপর ফোকাস করা উচিত। লেখক ধৈর্য ধরার এবং নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাওয়ার উপর জোর দেন।

Apr 21, 2024 - 20:00
Apr 21, 2024 - 02:50
 0  13
ব্লগিং জগতে দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের জন্য ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ১১টি টিপস
ব্লগিং জগতে দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের জন্য ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ১১টি টিপস

গত ৮ বছরের ব্লগিং অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ প্রদান করতে চাই। বিশেষ করে যারা নতুন করে ব্লগিং জগতে প্রবেশ করতে চাইছেন তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। কেউ নাম কামানোর জন্য, খ্যাতির জন্য অথবা শুধুমাত্র লেখালেখি ভালোবাসেন বলে ব্লগিং করতে চান। অন্যদিকে কেউ কেউ আয়-রোজগারের উৎস হিসেবে এই পেশা বেছে নিতে চান

 

আপনার তাৎক্ষণিক কোন আয়ের প্রয়োজন হলে কিছু শর্টকাট আছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে গেলে অবশ্যই আপনার কাজের প্রতি ধ্যান ও অধ্যবসায় থাকা প্রয়োজন। এই পরামর্শ শুধুমাত্র যারা দীর্ঘ সময় এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে চান এবং সুন্দর ক্যারিয়ার চান শুধুমাত্র তাদের জন্য। শর্টকাটে কিছু আয়-রোজগার এনে দিলেও সেটি কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারে রুপান্তর করা সম্ভব হবে না। এই পরামর্শ অনুসরণ করলে মাত্র এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আপনার আয় পরিণত হতে পারে সিক্স ডিজিট থেকে সেভেন ডিজিট পর্যন্ত

 

১. ভাষা নির্বাচন

বাংলা ভাষায় ব্লগিং করে খুব কম সময়ে কখনোই বেশি উপার্জন করা সম্ভবপর নহে। আপনার প্রথমেই ইংরেজি ভাষা নির্বাচন করতে হবে। মাতৃভাষা বাংলাতেও আয় করা সম্ভব কিন্তু সেটা একই পরিশ্রমে সম্ভব নয়

 

২. কাস্টম ডোমেইন এবং হোস্টিং

একেবারে শুরুর দিকে আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনি আপনার ব্রান্ডি কি নামে করতে চাইছেন? যে নাম-ই আপনার ভালোলাগে সে নামেই অনুগ্রহ করে ডট কম (.com)’ ডোমেইন ক্রয় করতে পারেন। মাথায় রাখবেন আপনার ডোমেইনের নাম যত ছোট হবে তত ভালো। একইসাথে অনুরুপ কিছু যদি অনলাইনে ইতোমধ্যেই থাকে তাহলে সেটা এড়িয়ে চলুন

 

হোস্টিং সাইটের স্পীডের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা সাইটের জন্য BDIX হোস্টিং প্যাকেজ নিতে পারেন। আর ইংরেজি সাইটের জন্য যদি সম্ভব হয় তাহলে ‘Hostinger শেয়ারড হোস্টিং ব্যবহার করুন। কিন্তু যদি আপনি একেবারেই ওয়েবসাইট সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা না রাখেন তাহলে বাংলাদেশেও বেশ কিছু সংস্থা ভালো মানের হোস্টিং প্যাকেজ প্রদান করছে আপনি সেসবের কোন একটির একেবারে ছোট প্যাকেজ ক্রয় করুন। কারণ প্রথম দিকে আপনার ট্রাফিক নামমাত্র থাকবে, অথবা থাকবেই না

 

৩. ওয়েব ডিজাইন ও সিএমএস

যদি আপনি টেক-সাভি না হোন তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ থিম ব্যবহার করুন। রঙচঙ মাখানো সাইটের চেয়ে তথ্যবহুল সাইট বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি মাথায় রাখতে হবে ওয়েব ডিজাইন বা সিএমএস এর জন্য আপনাকে এক টাকাও খরচ করা যাবে না

 

৪. পাঁচটি প্রয়োজনীয় পেজ

যেহেতু গুগল এডসেন্স সবচেয়ে বেশি রেভেনিউ আমাদের সাথে শেয়ার করে বা দেয় সেহেতু গুগলের শর্ত মতে আপনাকে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পেজ তৈরি করতে হবে,


(i) About Us

(ii) Contact Us

(iii) Privacy Policy

(iv) Terms and Conditions

(v) Disclaimer


এই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পেজ না থাকলে গুগল কখনোই অ্যাডসেন্স এপ্রুভ করবে না। তাই এই বিষয়ে একটু গুরুত্ব দেবেন

 

৫. কন্টেন্ট

আপনার পরিচিত কেউ থাকলেই সামান্য কিছু টাকায় উপরোক্ত সব কিছু নিজ পরিশ্রমে করে দিতে পারেন কিন্তু কেউই আপনাকে ফ্রি-তে কন্টেন্ট দেবে না। ব্লগিং ইন্ডাস্ট্রির হার্ট (হৃদয়) হচ্ছে কন্টেন্ট। যদি কন্টেন্ট ভালো হয় তাহলে পাঠক আপনাকে খুঁজে নেবে। আর যদি কন্টেন্ট নামমাত্র হয় তাহলে আপনাকে পাঠককে খুঁজে বের করতে হবে

 

কন্টেন্ট বা প্রবন্ধ বা আর্টিকেল যে নামেই বলুন যদি আপনি সেটি ভালো মানের লিখতে না পারেন তাহলে আপাতত ব্লগিং ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে দরকার নাই। কারণ গড়পড়তা লেখালেখি এখন সো-কল্ড কন্টেন্ট রাইটারের চেয়ে এআই বেশি ভালো লিখে দিচ্ছে

 

তবুও হয়তো মনে প্রশ্ন জাগছে, কি নিয়ে লিখবো?

সকালে কবিতা, দুপুরে গান, আর রাতে গল্প লিখে ব্লগে ছাড়লে আপনার ব্লগ কোনোভাবেই র‍্যাংক করবে না। আপনাকে খাতা-কলম নিয়ে বসে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে, মানুষের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও কি নিয়ে লেখা হয় নাই? হ্যাঁ, এই প্রশ্ন আপনাকে হতাশ করবে। কারণ খুব সম্ভবত এমন বিষয় প্রায় নাই বলা যায় যা নিয়ে কিছুই লেখা হয় নাই

 

একই জিনিস বারবার লেখার মধ্যে গুগল নতুনত্ব কিছুই খুঁজে পাবে না এবং আপনাকে অ্যাডসেন্সও দেবে না। সুতরাং যে বিষয়ে লিখছেন সে বিষয়ে একটি মেনু তৈরি পূর্বক শুধু লিখেই যাবেন। যতক্ষণ অ্যাডসেন্স এপ্রুভ না পাচ্ছেন ততক্ষণ লিখতেই থাকুন ঐ এক বিষয়ে, এক মেনুতে, এক ক্যাটেগরিতে।

 

কি-ওয়ার্ড ডিফিকাল্টি (KD)’ মানে অনলাইনে উক্ত বিষয়ে যুদ্ধ বা প্রতিযোগিতা কেমন চলছে সেটি Ahrefs Keyword Research’ বা ‘Semrush’ টুল ব্যবহার করে বারবার দেখুন। ধার করা, কারো চিন্তা চুরি করা এসব গুগল অ্যাডসেন্সের শর্তের খেলাপ। সুতরাং নিজে লিখুন, নিজের মাথাকে একটু চিন্তা করতে শেখান। প্রতিদিন অন্তত ৩-৫টি আর্টিকেল দেবার চেষ্টা করুন। কখনোই কোন আর্টিকেলের দৈর্ঘ্য ৬০০ শব্দের কম হওয়া যাবে না। অযাচিত শব্দ ও বাক্যাংশ ব্যবহার করবেন না

 

মনমর্জি চলবে না, যেটা প্রতিষ্ঠিত সত্য সেটাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবেন না। বরং প্রকাশকের মত ভূমিকা পালন করুন। যে আর্টিকেল মানুষ বেশি দেখছে অনুরুপ ধারণা নিয়ে আরো আর্টিকেল লিখুন। শুধু রেভেনিউ বেশি পাওয়ার নেশায় ইন্সুইরেন্স/ব্যাংক/লোন/স্কলারশিপ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লিখবেন না একটা কথা মনে রাখবেন, “Content is the King.”

 

৬. সোশ্যাল শেয়ার

আপনি যদি অনলাইন লেখা জমা দিয়ে চুপটি করে বসে থাকেন তাহলে তো চলবে না। আপনার প্রবন্ধের লিংক বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে শেয়ার করুন। এতে অনেকেই আগ্রহ পাবে এবং পড়বেও। তাছাড়াও সার্চ ইঞ্জিনে আপনার এসইও (SEO) হয়ে যাবে

 

৭. গুগল সার্চ কনসোল (Google Search Console)

যদি আপনি কন্টেন্ট লেখায় সৎ হোন তাহলে গুগল সার্চ কনসোলে নিয়মিত চোখ রাখুন। কোন পেজ কেন ইনডেক্স হচ্ছে না সেটা আবিস্কার করুন এবং ফিক্স করুন। এছাড়াও সার্চ কনসোলে কি শব্দের উপর বেশি সার্চ পড়ছে সেটা আপনি দেখতে পাবেন। সম্ভব হলে ঐ শব্দ ধরে ক্যাটেগরি নিয়ন্ত্রণ করে আরো আর্টিকেল লিখুন

 

৮. গুগল অ্যানালিটিক্স (Google Analytics)

আপনার ট্রাফিক কেমন আসছে? প্রতিদিন কত ট্রাফিক আসছে? দিনদিন কমছে না বাড়ছে? বাড়লে কত বাড়ছে? কোন পেজে বেশি ট্রাফিক আসছে? ইত্যাদি বিশ্লেষণ করলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনাকে কি নিয়ে লেখা উচিত। একই সাথে গুগল অ্যাডসেন্স, গুগল সার্চ কনসোল এবং গুগল অ্যানালিটিক্স সবসময় যুক্ত রাখুন

 

৯. গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense)

এভাবে লিখলে আপনি সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে গুগল অ্যাডসেন্স পেয়ে যাবেন। কিন্তু অ্যাডসেন্সেও অনেক কাজ আছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, গুগল অ্যাডসেন্স এর ফ্রি-তে দেওয়া কুকি সার্ভিস অন করুন। অটো বিজ্ঞাপন রাখুন, গুগল নিজে থেকেই বিজ্ঞাপন আপনার সাইটে প্রদর্শন করবে। এতে করে বিজ্ঞাপন সেট করার মান ঠিক নাই এবং ‘Ads Limit ইস্যুর মধ্যে পড়বেন না

 

১০. এসইও (SEO)

গুগলের নতুন আপডেটে এসইও মৃতপ্রায়। ৮০% ওয়েবসাইট ডাউন যাচ্ছে। সুতরাং এসইও বা ব্যাকলিংকগুলো সবসময় যাচাই করুন। কিন্তু একটা কথা যারা ভালো মানের আর্টিকেল লিখেছে তারা কিন্তু এই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন নি

 

১১. ধৈর্য্য

প্রথম প্রথম আয় দেখে খুব বেশি সন্তুষ্ট হবেন না, শতবার এমনকি হাজারবার মনে হতে পারে ব্লগিং করা ছেড়ে দেই! মনে হতে পারে আপনি আর পারছেন না! ঠিক সেদিনও ঘুম থেকে উঠে লিখতে বসুন আর নিঃশব্দে কাজ চালিয়ে যান


দেখা হবে সফলতায়! ✌️

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow