প্রথম বিসিএসেই সফলতার গল্প ও কিছু পরামর্শ

প্রস্তুতি ভালো হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার আগে অসুস্থ হওয়ায় এবং মাস্টার্স পরীক্ষা থাকায় লিখিত পরীক্ষা আশানুরূপ হয় না। তবে বিশ্বাস ছিল পাশ করবো। আল্লাহর রহমতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এবং ভাইভার জন্য প্রস্তুতি শুরু করি। তবে খুব একটা বেশি বই পড়তে পারি নাই। কেননা ইতিমধ্যে আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তবে ভাইভা সহায়ক বই হিসাবে ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি বইটি পড়ি।

Feb 12, 2024 - 10:00
Feb 12, 2024 - 16:16
 0  24
প্রথম বিসিএসেই সফলতার গল্প ও কিছু পরামর্শ
প্রথম বিসিএসেই সফলতার গল্প ও কিছু পরামর্শ

ইন্টারভিউ নিয়েছেন: আতিকুর রহমান (আতিক)

প্রথম প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০২৩


প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম।
আপনি কেমন আছেন?

জিয়াউর রহমান: ওয়া আলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।


প্রশ্ন: ৪১তম বিসিএস এ আপনি শিক্ষা-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। কেমন লাগছে আপনার
?

জিয়াউর রহমান: আল্লাহর বিশেষ দয়ায় আমি ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এরকম আনন্দের অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই এই বিসিএস শব্দটার সাথে পরিচিত হই। তখন থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আর এ স্বপ্ন যখন পূরণ হয় তখন এ আনন্দের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।


প্রশ্ন: আমি যতদূর জানি এটা আপনার প্রথম বিসিএস ছিল। প্রথম বিসিএস এ এতো বড় সাফল্য কিভাবে পেলেন?

জিয়াউর রহমান: ৪১তম বিসিএস আমার প্রথম বিসিএস ছিল। এপেয়ার্ড দিয়ে আবেদন করি। আমি বিসিএসের পড়াশুনা শুরু করি দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় যেকোনো ভাবেই হোক একটা চাকুরি পেতে হবে এই হিসেব করে পড়াশুনা করি। তবে মূল টার্গেট ছিল বিসিএস।


চতুর্থ বর্ষ শেষের দিকে এসে মোটামুটি বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। কিন্তু পরীক্ষার আগ মূহুর্তে করোনার আঘাতে সবকিছু ওলোট পালোট হয়ে যায়। নিজের জিবনের যেখানে নিশ্চয়তা নেই সেখানে পড়াশোনা করে কি হবে।  এ কারণে পড়াশুনা থেকে অনেকটা দূরে সরে যাই।


আবার করোনার প্রকোপ কমে আসলে পরীক্ষার দুই মাস আগ থেকে পড়াশোনা শুরু করি।  আমার এক কাছের বন্ধুর মেসে থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেই। কারণ ঐ সময় হল বন্ধ ছিল। আর দুই এক মাসের জন্য মেস ভাড়া পাওয়া যেত না। পূর্বের প্রস্তুতি থাকায় শুধু দুই মাস ডাইজেস্ট পড়েই প্রিলিমিনারিতে কাটমার্কের কিছু বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হই।


প্রিলিমিনারির রেজাল্টের আগ পর্যন্ত গণিত চর্চা করেছি। রেজাল্টের পর লিখিত প্রস্তুতি শুরু করি। লিখিত পরীক্ষার আগে ৩-৪ মাস সময় পাওয়া যায়। লিখিত পরীক্ষার বিশাল সিলেবাস এত কম সময়ে শেষ করা সম্ভব হয় না। তারপরও যতটুকু সম্ভব সিলেবাস শেষ করার চেষ্টা করেছি।


প্রস্তুতি ভালো হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার আগে অসুস্থ হওয়ায় এবং মাস্টার্স পরীক্ষা থাকায় লিখিত পরীক্ষা আশানুরূপ হয় না। তবে বিশ্বাস ছিল পাশ করবো। আল্লাহর রহমতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এবং ভাইভার জন্য প্রস্তুতি শুরু করি। তবে খুব একটা বেশি বই পড়তে পারি নাই। কেননা ইতিমধ্যে আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তবে ভাইভা সহায়ক বই হিসাবে ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি বইটি পড়ি।


এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই পড়ি। ভাইভা আমার মোটামুটি হয়েছে। তবে বিশ্বাস ছিল পাশ করে দিলে শিক্ষা ক্যাডার অন্তত আসবে। চুড়ান্ত রেজাল্টের পর শিক্ষা ক্যাডারে নিজের রোলটা দেখার পর চোখে পানি চলে আসছে।


প্রশ্ন: আপনার বিসিএস প্রস্তুতির যাত্রাটা কেমন ছিল?

জিয়াউর রহমান: বিভিন্ন ভাবে বিসিএস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। এ ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন চাকুরিতে কি ধরনের প্রশ্ন আসে সেটাও জেনেছি। গণিত যে কোন চাকুরির পরীক্ষায় অন্যতম বিষয়।


আমি গণিতে দূর্বল হওয়ায় গণিত দিয়েই শুরু করি। পাশাপাশি জব সলিউশন পড়তে শুরু করি। কারণ এই বইটা পড়তে আমার মজা লাগে। এরপর আসতে আসতে বিষয় ভিত্তিক বই পড়া শুরু করি।


প্রশ্ন: নতুন যারা বিসিএস দিচ্ছে তাদের প্রস্তুতিটা কিভাবে নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

জিয়াউর রহমান: আমি মনে করি যে, যিনি যেটাতে দূর্বল সে বিষয়ের দূর্বলতা আগে দূর করা।


প্রশ্ন: আমি যতদূর জানি আপনি গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন। অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন এ সম্পর্কে যদি বলতেন?

জিয়াউর রহমান: আপনি ঠিকই বলেছেন, আমি গ্রাম থেকে উঠে এসেছি। তবে এ পথ পাড়ি দিতে খুব কম মানুষ আমাকে সাহায্য করেছে। সেই সংখ্যাটা হাতে গোনা কয়েকজন। পরিস্থিতি আমাকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করেছে এবং আল্লাহ সব সময় আমার সাথে ছিলেন। সে কারণে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।


প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকে আপনার বেড়ে উঠা কেমন ছিল?

জিয়াউর রহমান: ছোটবেলা থেকে আমি শান্ত শিষ্ট ছিলাম। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় অন্য ছেলেদের সাথে মেশার সুযোগ কম হয়েছে। কেউ কিছু বললে মুখে মুখে উত্তর করার সাহস ছিল না। কোন ছেলে মারলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি আসতাম। প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না। একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে বাবার সাথে মাঠে কাজ করা শুরু করি।


ফলে বাইরের পরিবেশের সাথে মেশা আরও কঠিন হয়ে যায়। পড়াশোনায় মাঝারি মানের স্টুডেন্ট ছিলাম। তবে সময়ের সাথে সাথে পড়াশোনার আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে খুব বেশি সময় পড়তে পারতাম না।


প্রশ্ন: আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা আপনাকে শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন?

জিয়াউর রহমান: আমি আগেই বলেছি তেমন কোন সহযোগিতা পাই নাই। তবে বাড়ির পাশে একজন অফিসার ছিলেন। তিনি বিএডিসিতে চাকুরি করতেন। সবাই তাকে অফিসার বলে চিনতেন। অনেকে ওনার নাম জানে না। আমরা দাদা বলে ডাকতাম। তিনি দেখা হলেই ইংরেজি ধরতেন। আর পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দিতেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে কিছু বড় ভাই, বন্ধু বান্ধব ও দুই একজন শিক্ষক কিছু সময় আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।


প্রশ্ন: আপনার কোন বিষয়ে পরামর্শ আছে কী?

জিয়াউর রহমান: আমার পরামর্শ হবে জীবনে সততা বজায় রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।


প্রশ্ন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেবার জন্য।

জিয়াউর রহমান: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমার মত আল্লাহর নগণ্য বান্দার সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকার জন্য।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow